দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীর উত্তাল স্রোত আর প্রকৃতির তাণ্ডব কেড়ে নিল এক তরুণ মাঝির জীবন। নিখোঁজ হওয়ার চারদিন পর উদ্ধার করা হলো মাঝি সুমন দাস সুনীলের নিথর দেহ।
শনিবার (২৪ মে) সকালে উপজেলার বড়খাল ফুটানী বাজার এলাকার যমুনা নদীতে স্থানীয় মাঝিদের চোখে পড়ে একটি মরদেহ। পরে এগিয়ে গিয়ে তারা নিশ্চিত হন—এটাই নিখোঁজ সুমন দাস সুনীল (২২)।
সুমন দেওয়ানগঞ্জের হালকারচর ফুটানী বাজার এলাকার সুরিন্দ্র মোহন দাসের ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। জীবনের তাগিদে প্রতিদিনই যাত্রী পারাপারে নদী পাড়ি দিতেন নিজের ছোট নৌকাটি নিয়ে।
প্রতিদিনের মতোই গত ১৯মে সুনীল যাত্রী নিয়ে যমুনার বুকে নেমেছিলেন। গন্তব্য ছিল গাইবান্ধার বালাসীঘাট। যাত্রা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রকৃতি রূপ পাল্টায়। হঠাৎ আকাশ কালো করে নামে ঝড়ো হাওয়া আর বজ্রপাত। যমুনার বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে নৌকাটি নদীর ধারে এসে আটকে যায়। সে সময় নৌকাটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছিলেন সুনীল। ঠিক তখনই এক ভয়াবহ মুহূর্ত—নদীর পাড় ভেঙে সোজা তার ওপর পড়ে। সে মুহূর্তেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
যাত্রীরা প্রাণভয়ে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করলেও মাঝি সুনীলের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। এরপর এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে তল্লাশি এবং পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দুদিন অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি।
চারদিন পর সকালে যখন নদীর জলে দুলতে থাকা দেহটি দেখা গেল, তখন এলাকার মানুষের চোখে মুখে ভেসে উঠলো বিষাদের ছায়া।
সুনীলের মা বিষাখা দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার পোলাটাই ছিল আমাদের ভরসা। ও ছাড়া সংসারে আয় করবার কেউ নাই। মাটির নিচে চাপা পড়ে আমার পোলাটা মরে গেল, এখন আমরা কীভাবে বাঁচুম?”
এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, “মাঝির পরিবারকে প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সহযোগিতা করা হবে।”