নিজস্ব প্রতিবেদক : জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে এক রাজমিস্ত্রিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল থেকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে। এ ঘটনায় ভিডিও দেখে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার রাজমিস্ত্রী মো. মামুন (৩০) জামালপুর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের গণেশপুর এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।
গত বুধবার রাতে শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে তাঁকে বেদম পেটানো হয়। গুরুতর আহত মামুনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন মো. ইলিয়াস (২৫) ও মো. মিজানুর রহমান। তাঁদের দুজনের বাড়ি শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজমিস্ত্রি মো. মামুন ওই এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে কাজ করেন। হাসমতের কাছে কাজের টাকা পেতেন মামুন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। টাকা নিয়ে প্রথমে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাসমত, তাঁর স্বজন এবং প্রতিবেশীরা রাজমিস্ত্রি মামুনকে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাঁকে একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে ব্যাপক পেটানো হয়।
নির্যাতনের শিকার যুবকের মা মাজেদা বেগম বলেন, আমার পুলাডা রাজমিস্ত্রীর কাজকাম কইরা আমগরে চালায়। আর পুলাডা পাওনা টাকা চাইতে গেছিলো। আর আমার পুলাডারে চোরের অপবাদ দিয়ে মাইরে শেষ করছে। সারা গায়ে (শরীর) শুধু আঘাত আর আঘাত। মাইরে মাইরে ঠ্যাং দুটো শেষ কইরা দিছে। পুলাডা এহন দাঁড়াবার পাইতাছে না। মানুষ মানুষকে এইভাবে মারতে পারে? আমি বিচার চাই। যাতে আমাদের মতো গরিবরে আর এইভাবে কেউ মিছে অপবাদ না দিয়ে মারে।
ঘটনার পর থেকে হাসমত তালুকদারের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে । তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নারায়ণপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মনজুরুল হক জানান, মূলত ওই দুজনের মধ্যে পাওনা টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। এ ঘটনায় ওই বাড়িতে চিৎকার–চেঁচামেচি শুরু হয়। অন্যদিকে ওই এলাকায় সম্প্রতি গরু ও ইজিবাইক চুরি হয়েছিল। পরে স্থানীয় লোকজন মামুনকে চোরের অপবাদ দিয়ে হাসমত তালুকদারের বাড়ির বাইরে মারধর শুরু করেন। পরে তাঁকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে একটি ঘরের মধ্যে তুলেও পেটানো হয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।
জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এভাবে নিরীহ ছেলেকে চোরের অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করতে পারে? ভিডিও টা দেখার পর গা শিউরে উঠেছে। আমরা চাই যারা এভাবে নির্যাতন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।